হতাশ ২০ দলীয় জোটের বাইরে ইসলামী দলগুলো, কী করবে?
- ফয়েজ উল্লাহ ভূঁইয়া
- ১১ ডিসেম্বর ২০১৮, ১১:৪৭
২০ দলীয় জোটের বাইরে থাকা ইসলামী দলগুলোর মধ্যে হতাশা বিরাজ করছে। জোট-মহাজোটে দরকষাকষিতে আসন না পেয়ে কোনো কোনো দল যেমন জোট ছেড়েছে, তেমনি সমঝোতার আসন না পেয়ে অভিমানে প্রার্থী অনেকে নিজ দলের ব্যানারেও শেষ পর্যন্ত প্রার্থী হননি। এখন প্রতীক রক্ষা ও অস্তিত্বের জানান দিতে দলীয় প্রতীক নিয়ে নামমাত্র নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে কয়েকটি দল। অন্য দিকে ২০ দলীয় জোটের শরিক প্রায় সব দলই কাক্সিক্ষত আসন না পেলেও প্রাপ্ত আসন নিয়েই নির্বাচনী লড়াইয়ে নামছে।
২০ দলীয় জোট থেকে বের হয়ে যাওয়া বহুল আলোচিত ইসলামী ঐক্যজোট, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, বাংলাদেশ ইসলামী ঐক্যজোট, ইসলামী ফ্রন্ট, সম্মিলিত ইসলামী জোট, বেফাক ও হেফাজতে ইসলামের আওয়ামী লীগের সাথে ঘনিষ্ঠ শীর্ষ নেতাদের কেউই মহাজোট থেকে কোনো আসন পায়নি। তবে চরমোনাই পীরের নেতৃত্বাধীন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ও খেলাফত আন্দোলন কোনো জোট-মহাজোটে যুক্ত না হয়েই শুরু থেকেই এককভাবে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে জানিয়েছেন দল দু’টির নেতারা।
বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট থেকে বের হয়ে যাওয়া ইসলামী ঐক্যজোটের আমির মাওলানা আবদুল লতিফ নেজামীর কাছে নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোটের সাথে নির্বাচনী সমঝোতা না হওয়া ও জোটে হতাশার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এগুলো পত্রপত্রিকায় লেখা হয়েছে। আসলে আমরা দলীয়ভাবেই নির্বাচন করছি। জোটের আমির হিসেবে তিনি নিজে, মহাসচিব মুফতি ফয়জুল্লাহ ও জোটের ভাইস চেয়ারম্যান ও মুফতি আমিনীর ছেলে মাওলানা আবুল হাসনাত আমিনীর নির্বাচনে প্রার্থীই না হওয়ার বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে মাওলানা নেজামী বলেন, আমার নমিনেশন পেপার জমা দিতে যেতে একটু দেরি হওয়ায় রিটার্নিং অফিসার জমা নেয়নি। আমি এ ব্যাপারে উচ্চ আদালতে আপিল করেছি। মুফতি ফয়জুল্লাহর বাবা মাতার মৃত্যুজনিত শোকের কারণে প্রার্থী হননি। আর আবুল হাসনাত আমিনী নিজ থেকেই প্রার্থী হননি। তিনি জানান, দলের ২৪ জন মিনার প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করছেন। আমরা দলীয়ভাবে নির্বাচন করছি।
তবে ইসলামী ঐক্যজোটের আসন্ন নির্বাহী দলীয় প্রতীকে নির্বাচন করছেন এমন নেতা গত রাতে এই প্রতিবেদনের সাথে আলাপকালে অবশ্য সরকারের সাথে আসন নিয়ে সমঝোতা না হওয়ায় দলের শীর্ষ নেতারা প্রার্থী না হওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, আমরা দলীয় প্রতীকেই নির্বাচন করতেও রাজি ছিলাম। কিন্তু সেভাবে আমাদেরকে মহাজোট থেকে আসন ছাড়া হয়নি। অন্য দিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসন থেকে আবুল হাসনাত আমিনীকে নৌকা প্রতীক দিতে রাজি না হওয়ায় শেষ পর্যন্ত অভিমান করে দলীয়ভাবেও আবুল হাসনাত আমিনী প্রার্থীই হননি বলে এই নেতা জানান। ইসলামী ঐক্যজোটের একটি সূত্র জানিয়েছে, মহাজোটের পক্ষ থেকে সর্বশেষ একটি আসনে বিজয়ী হওয়ার ব্যাপারে সর্বাত্মক সহযোগিতার আশ্বাস দেয়া হয়েছে।
কুমিল্লা-১ আসনে ইসলামী ঐক্যজোট থেকে প্রার্থী হয়েছেন মাওলানা আলতাফ হোসাইন। নির্বাচনের ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা আমাদের দলীয় প্রতীক নিয়েই নির্বাচন করার আশা করছি। জনগণ আমাদের ভোট দিলে নির্বাচিত হবো। না দিলে হবো না। এতে হতাশার কিছু নেই। আমরা নির্বাচনী মাঠে আছি। আমাদের নেতাকর্মীরা সক্রিয় চাঙ্গা হচ্ছে। তবে নিজে বিজয়ের ব্যাপারে আশাবাদী বলে জানান।
এরশাদের নেতৃত্বে সম্মিলিত জাতীয় জোটভুক্ত হয়ে মহাজোট থেকে আসন ভাগাভাগিতে ব্যর্থ হয়ে এখন দলীয় প্রতীকে এককভাবে ৬টি আসনে রিকশা প্রতীকে নির্বাচন করছে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস। দলটির যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা আজিজুর রহমান হেলালের কাছে জানতে চাইলে তিনি বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, আমরা জোট থেকে বের হয়ে গেছি। এরশাদ সাহেবের সাথে আমাদের সমঝোতা হয়নি। দলে এ নিয়ে কিছুটা হতাশার কথাও জানান তিনি। এই দলের শীর্ষপর্যায়ের কোনো নেতাই নির্বাচনে প্রার্থী হননি। খেলাফত আন্দোলন থেকে বের হয়ে আলাদা খেলাফত আন্দোলন গড়ে তুলে আলাদা সম্মিলিত ইসলামী জোটের নেতৃত্বে সরকারের সাথে আসন ভাগাভাগির জন্য যোগাযোগ করেও কোনো আসন পায়নি জোটটি। ফলে এ জোটের কেউই প্রার্থী হননি।
কওমি সনদ ও বেফাক ইস্যুতে সরকার ঘনিষ্ঠ বেশ কয়েকজন আলোচিত আলেম নির্বাচনে মহাজোট থেকে প্রার্থী হওয়ার জন্য নানাভাবে চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু তাদের কারো ভাগ্যেই শেষ পর্যন্ত কোনো আসন জোটেনি। মহাজোট থেকে আসনের প্রত্যাশী ছিল ইসলামী ফ্রন্টের দু’টি অংশ এবং বাংলাদেশ ইসলামী ঐক্যজোট। কিন্তু একমাত্র তরিকত ফেডারেশনের ২টি আসন ছাড়া আওয়ামী লীগ ঘেঁষা কোনো ইসলামী দলই আসন পায়নি। এসব দলেও হতাশা বিরাজ করছে বলে সংশ্লিষ্টদের সাথে আলাপ করে জানা যায়।
স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচন করছে ইসলামী আন্দোলন ও খেলাফত আন্দোলন। ইসলামী আন্দোলনের ঢাকা মহানগরীর সভাপতি মাওলানা ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, আমরা ইসলামী দলগুলোকে অন্যান্য জোট-মহাজোট ছেড়ে আমাদের সাথে এসে নির্বাচন করতে বলেছিলাম। তারা আসেনি। ফলে আমরা এককভাবে এখন ২৯৮টি আসনে নির্বাচন করছি। আরো দু’টি আসনের বিষয় উচ্চ আদালতে আছে। খেলাফত আন্দোলনের নায়েবে আমির মাওলানা মুজিবুর রহমান হামিদী বলেন, শুরু থেকেই আমরা আলাদা নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছি এবং প্রার্থী দিয়েছি। ফলে আমাদের কোন হতাশা নেই। সারাদেশে ২৩টি আসনে দলটি নির্বাচন করছে এবং আরো একটি আসনের ফায়সালা উচ্চ আদালতে হবে বলে তিনি জানান। ফলে আমাদের মধ্যে হতাশার কোনো বিষয় নেই।
২০ দলের মধ্যে দল জামায়াতে ইসলামী ২২টি, জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের দু’টি অংশ ৪টি, খেলাফত মসলিস ২টি আসনে নির্বাচন করছে। বাদ পড়েছে শুধু অ্যাডভোকেট আবদুর রকিবের নেতৃত্বাধীন ইসলামী ঐক্যজোট। এ জোট থেকে প্রার্থিতার জন্য জোরালো দাবিও ছিল না বলে জানা গেছে। কাক্সিক্ষত আসন না পেলেও ইসলামী দলগুলো অনেকটা চাঙ্গা মনোভাব নিয়েই নির্বাচনী মাঠে সক্রিয় হচ্ছে বলে নেতাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে। এ ব্যাপারে জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের একাংশের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা ওয়ালী উল্লাহ আরমান বলেন, দেশ জাতি ও গণতান্ত্রিক আন্দোলনের বৃহত্তর স্বার্থেই জোটভুক্ত দলগুলোকে সেক্রিফাইজ করতে হচ্ছে। ফলে এখানে হতাশা ও মান অভিমানের বিষয়গুলো প্রাধান্য পাচ্ছে না। এখন সবাই নির্বাচনী মাঠে সক্রিয় হচ্ছে।